গর্ভাবস্থার তৃতীয় তিন মাস প্রসবের প্রস্তুতি ও লক্ষণ

 


গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিক (সপ্তম থেকে নবম মাস) হল গর্ভধারণের শেষ পর্যায়। এই সময়ে মায়ের শরীর প্রসবের জন্য ধীরে ধীরে প্রস্তুত হতে শুরু করে এবং গর্ভের শিশুও পূর্ণতা লাভ করে। এই সময় মায়ের নিজের শরীরের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া এবং প্রসবের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে মায়ের শরীরে কিছু পরিবর্তন স্পষ্ট noticeable হয়। জরায়ু আকারে আরও বড় হওয়ায় পেটের আকার বৃদ্ধি পায়, যা শ্বাসকষ্ট, বুক জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে। বাচ্চার নড়াচড়া এই সময় আরও শক্তিশালী ও স্পষ্ট অনুভব করা যায়। অনেকের পায়ে ও গোড়ালিতে হালকা सूजन দেখা দিতে পারে। ঘুমের সমস্যা এবং পিঠে ব্যথাও এই সময়ের সাধারণ discomfort।

এই সময়ে প্রসবের প্রস্তুতি এবং প্রসবের লক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রসবের প্রস্তুতি:

  • প্রসব পরিকল্পনা: ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে একটি প্রসব পরিকল্পনা তৈরি করুন। আপনি কোথায় প্রসব করাতে চান (হাসপাতাল, ক্লিনিকে নাকি বাড়িতে), প্রসবের সময় আপনার কি কি প্রয়োজন, ব্যথানাশক ব্যবহারের ইচ্ছা আছে কিনা—এইসব বিষয় আগে থেকে ঠিক করে রাখা ভালো।
  • হাসপাতালের ব্যাগ গোছানো: প্রসবের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের একটি ব্যাগ গুছিয়ে রাখুন। মায়ের জন্য আরামদায়ক পোশাক, স্যানিটারি ন্যাপকিন, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির জিনিস এবং বাচ্চার জন্য পোশাক, কাঁথা, ডায়াপার ইত্যাদি রাখুন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং পরিচয়পত্রও সাথে রাখুন।
  • প্রসবপূর্ব ক্লাস: অনেক হাসপাতাল বা ক্লিনিকে প্রসবপূর্ব ক্লাসের ব্যবস্থা থাকে। এই ক্লাসগুলোতে প্রসব প্রক্রিয়া, ব্যথানাশক পদ্ধতি এবং নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত শেখানো হয়। এই ক্লাসগুলোতে অংশগ্রহণ করা নতুন মা-বাবাদের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে।
  • মানসিক প্রস্তুতি: প্রসব একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও অনেক মায়ের মনে ভয় ও উদ্বেগ কাজ করতে পারে। ইতিবাচক থাকা, পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলা এবং প্রয়োজনে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

প্রসবের লক্ষণ:

প্রসবের লক্ষণগুলো জানা থাকলে সঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া সম্ভব এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এড়ানো যায়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রসব লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • তলপেটে ব্যথা ও সংকোচন: প্রসবের শুরুতে তলপেটে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং নিয়মিত বিরতিতে আসতে শুরু করে। এই সংকোচনগুলো সময়ের সাথে সাথে আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। মিথ্যা প্রসববেদনা (Braxton Hicks contractions) irregular হয় এবং তেমন তীব্র হয় না, তবে নিয়মিত ও তীব্র সংকোচন শুরু হলে তা প্রসবের লক্ষণ হতে পারে।
  • জল ভাঙা: অ্যামনিওটিক থলি ফেটে গেলে যোনিপথ দিয়ে তরল নির্গত হতে পারে। এটি প্রসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ এবং এর পরেই সাধারণত প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হয়। জল ভাঙার সাথে সাথেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
  • শ্লেষ্মা নির্গমন (Mucus plug): গর্ভাবস্থায় জরায়ুমুখ একটি শ্লেষ্মার প্লাগ দিয়ে বন্ধ থাকে। প্রসবের কয়েক দিন বা কয়েক ঘণ্টা আগে এটি যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসতে পারে। এটি প্রসবের একটি প্রাথমিক লক্ষণ।
  • বাচ্চার নড়াচড়া কমে যাওয়া: যদি গর্ভের বাচ্চা আগের তুলনায় অনেক কম নড়াচড়া করে বা নড়াচড়ার ধরণ পাল্টে যায়, তবে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
  • তলপেটে চাপ অনুভব: বাচ্চা যখন প্রসবের জন্য নিচের দিকে নামতে শুরু করে, তখন মায়ের তলপেটে চাপ অনুভব হতে পারে।

যদি এই লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা যায়, তবে দেরি না করে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। ডাক্তার আপনার অবস্থা পরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে পরামর্শ দেবেন।

এই সময়ে মায়ের যত্ন:

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে মায়ের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ ध्यान রাখা উচিত।

  • সুষম আহার: পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা চালিয়ে যান। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
  • পর্যাপ্ত জল পান: ডিহাইড্রেশন এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
  • বিশ্রাম: পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নেওয়া এই সময়ে খুবই জরুরি। বাম কাত হয়ে ঘুমানো শরীরের রক্ত সঞ্চালনের জন্য ভালো।
  • হালকা ব্যায়াম: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা চালিয়ে যান।
  • অতিরিক্ত ওজন বহন পরিহার: ভারী জিনিস তোলা বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকুন।
  • নিয়মিত চেকআপ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

তৃতীয় ত্রৈমাসিক গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি অপেক্ষার সময়। সঠিক প্রস্তুতি এবং নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখলে একটি স্বাভাবিক ও সুস্থ প্রসবের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। প্রসবের লক্ষণগুলো সম্পর্কে অবগত থাকুন এবং প্রয়োজনে দ্রুত ডাক্তারের সাহায্য নিন। আপনার এবং আপনার সন্তানের সুস্থতা কাম্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন