সাধারণ জ্বর নাকি করোনা: কখন সতর্ক হবেন?





 সাধারণ জ্বর এবং কোভিড-১৯ (করোনা) এর মধ্যে পার্থক্য বোঝা আজকাল খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময়ই এই দুটি রোগের লক্ষণগুলি এতটাই মিলে যায় যে কোনটি কী তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই, কখন সাধারণ জ্বর ভেবে নিশ্চিন্ত থাকবেন আর কখন করোনার জন্য পরীক্ষা করাবেন, তা নিয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।

সাধারণ জ্বরের লক্ষণ:

সাধারণত সাধারণ জ্বরের ক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলো হলো:

  • শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়া (৯৯-১০১° ফারেনহাইট)
  • মাথাব্যথা
  • শরীর ম্যাজম্যাজ করা বা হালকা ব্যথা
  • হালকা কাশি
  • নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ থাকা
  • হাঁচি
  • গলা ব্যথা

এই লক্ষণগুলো সাধারণত ২-৩ দিনের মধ্যে কমে আসে এবং ঘরোয়া চিকিৎসাতেই বেশিরভাগ মানুষ সুস্থ হয়ে যান।

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) লক্ষণ:

করোনার লক্ষণগুলো সাধারণ জ্বরের মতোই হতে পারে, তবে কিছু বিশেষ লক্ষণও দেখা যায়:

  • উচ্চ তাপমাত্রা: প্রায়শই ১০২° ফারেনহাইট বা তার বেশি জ্বর।
  • শুকনো কাশি: সাধারণত তীব্র এবং অবিরাম কাশি।
  • শ্বাসকষ্ট: এটি করোনার একটি গুরুতর লক্ষণ।
  • ঘ্রাণ ও স্বাদ হারানো: এটি করোনার একটি স্বতন্ত্র লক্ষণ যা সাধারণ জ্বরে খুব কমই দেখা যায়।
  • তীব্র ক্লান্তি: সাধারণ জ্বরের চেয়ে অনেক বেশি ক্লান্তি অনুভব করা।
  • শরীরে তীব্র ব্যথা: মাংসপেশিতে এবং হাড়ে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
  • গলা ব্যথা বা গলা শুকিয়ে যাওয়া।
  • বমি বমি ভাব বা ডায়রিয়া (কম ক্ষেত্রে)।

কখন সতর্ক হবেন এবং করোনার পরীক্ষা করাবেন?

যদি আপনার সাধারণ জ্বরের লক্ষণ দেখা যায় কিন্তু তার সাথে নিচের বিষয়গুলো থাকে, তবে আপনাকে সতর্ক হতে হবে এবং দ্রুত করোনার পরীক্ষা করানো উচিত:

  1. জ্বরের তীব্রতা: যদি জ্বর ১০১° ফারেনহাইট বা তার বেশি হয় এবং কয়েকদিনেও না কমে।
  2. শ্বাসকষ্ট: যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভব করেন।
  3. ঘ্রাণ বা স্বাদ হারানো: যদি আপনার ঘ্রাণ বা স্বাদের অনুভূতি চলে যায়।
  4. অবিরাম শুকনো কাশি: যদি তীব্র এবং অবিরাম শুকনো কাশি হয়।
  5. তীব্র ক্লান্তি: যদি অস্বাভাবিক রকমের ক্লান্তি অনুভব করেন যা আগে কখনো হয়নি।
  6. যদি আপনি সম্প্রতি কোনো করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে থাকেন।
  7. যদি আপনার বয়স বেশি হয় বা আপনার অন্য কোনো গুরুতর রোগ (যেমন - ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টের সমস্যা) থাকে।

করণীয়:

  • বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
  • জল পান: প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করুন।
  • জ্বর কমানো: প্রয়োজনে প্যারাসিটামল সেবন করুন (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।
  • মাস্ক পরিধান: যদি আপনার জ্বর থাকে, তবে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করুন এবং অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ: যদি লক্ষণগুলো গুরুতর হয় বা সন্দেহ হয় যে এটি করোনা হতে পারে, তবে দেরি না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করান।

মনে রাখবেন, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকুন এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন