৬-১২ মাস বয়সী শিশুর খাদ্য এবং যত্ন

 


৬ থেকে ১২ মাস বয়স শিশুদের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময়ে, শিশুরা মায়ের দুধের পাশাপাশি নতুন খাবার গ্রহণ করতে শুরু করে এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে দ্রুত পরিবর্তন আসে। এই সময়ে সঠিক খাদ্য এবং যত্ন প্রদান করা শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে।৬-১২ মাস বয়সী শিশুর খাদ্য:

এই সময়ে, শিশুদের খাদ্য তালিকা ধীরে ধীরে প্রসারিত করতে হয়। প্রথমে, সহজে হজমযোগ্য খাবার দিয়ে শুরু করতে হয় এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার যোগ করতে হয়।

  • ৬-৮ মাস: এই সময়ে, শিশুদের প্রধান খাদ্য মায়ের দুধ অথবা ফর্মুলা হওয়া উচিত। এর পাশাপাশি, অল্প পরিমাণে কঠিন খাবার শুরু করা যায়।

    • চালের গুঁড়ো বা সুজি পাতলা করে তৈরি করে দিন।
    • সেদ্ধ করা সবজি, যেমন আলু, মিষ্টি আলু, গাজর, এবং কুমড়ো নরম করে চটকে দিন।
    • ফল, যেমন কলা, আপেল, পেঁপে সেদ্ধ করে নরম করে দিন।
    • ডালের জল বা ডাল সেদ্ধ করে ভালোভাবে চটকে দিন।
  • ৮-১২ মাস: এই সময়ে, শিশুদের খাদ্যের পরিমাণ এবং প্রকার বাড়ানো যেতে পারে।

    • দিনে ২-৩ বার পরিপূরক খাবার দিন।
    • বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফল সেদ্ধ করে দিন।
    • ডিম সেদ্ধ করে কুসুম দিন, পরে পুরো ডিম ভালোভাবে রান্না করে দিন।
    • মাছ কাঁটা ও চামড়া ছাড়া নরম করে দিন।
    • মুরগির মাংসের কিমা দিন।
    • খিচুড়ি (চাল, ডাল, সবজি মিশিয়ে নরম করে রান্না করা)।
    • দই দিন।
    • হাতের তৈরি খাবার, যেমন নরম ফল ও সবজির টুকরা, টোস্ট দিন।

গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান:

  • আয়রন: এই সময়ে শিশুদের শরীরে আয়রনের চাহিদা বাড়ে। ডিমের কুসুম, কলিজা, সবুজ শাকসবজি, ডাল এবং আয়রন সমৃদ্ধ সিরিয়াল দিন।
  • জিঙ্ক: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জিঙ্ক দরকার। মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার এবং বাদাম জিঙ্কের ভালো উৎস।
  • ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁতের জন্য ক্যালসিয়াম জরুরি। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, সবুজ শাকসবজি এবং ছোট মাছ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।
  • ভিটামিন ডি: ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন। ডিমের কুসুম, তৈলাক্ত মাছ এবং সূর্যের আলো ভিটামিন ডির ভালো উৎস।
  • প্রোটিন: শরীরের কোষ গঠন ও মেরামতের জন্য প্রোটিন দরকার। মাছ, মাংস, ডিম, ডাল এবং দুগ্ধজাত খাবার প্রোটিনের ভালো উৎস।
  • ফ্যাট: মস্তিষ্কের বিকাশ এবং শক্তি সরবরাহের জন্য ফ্যাট জরুরি। ঘি, মাখন, তেল এবং ডিম ফ্যাটের ভালো উৎস। তবে, অতিরিক্ত ফ্যাট শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

খাবার তৈরির নিয়মাবলী:

  • খাবার তৈরির আগে ও পরে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
  • রান্নার সরঞ্জাম এবং শিশুর থালা-বাসন পরিষ্কার রাখুন।
  • খাবার সেদ্ধ, ভাপে বা হালকা তেলে রান্না করুন। ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • খাবারে অতিরিক্ত লবণ, চিনি বা মসলা মেশাবেন না।
  • শিশুকে শান্ত ও আনন্দপূর্ণ পরিবেশে খাবার খাওয়ান।
  • ধৈর্য ধরুন, নতুন খাবার গ্রহণে শিশুর সময় লাগতে পারে।
  • ছয় মাস বয়সের পর শিশুকে অল্প পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করানো শুরু করুন।

৬-১২ মাস বয়সী শিশুর যত্ন:

খাবারের পাশাপাশি, এই সময়ে শিশুদের সঠিক যত্ন নেওয়াটাও জরুরি।

  • ঘুম: এই বয়সে শিশুদের দৈনিক ১২-১৪ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। ঘুমের অভাব শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
  • শারীরিক কার্যকলাপ: শিশুকে হামাগুড়ি দেওয়া, বসা, দাঁড়ানো এবং হাঁটার জন্য উৎসাহিত করুন। খেলাধুলা তাদের মাংসপেশি ও হাড়ের বিকাশে সাহায্য করে।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: শিশুর ত্বক ও জামাকাপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। নিয়মিত গোসল করান। দাঁত বের হলে নরম ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন।
  • নিরাপত্তা: শিশুর খেলার জায়গা এবং আশেপাশে ধারালো বা বিপজ্জনক জিনিসপত্র সরিয়ে রাখুন।
  • স্নেহ ও ভালোবাসা: শিশুকে পর্যাপ্ত স্নেহ ও ভালোবাসা দিন। তাদের সাথে কথা বলুন, গান শুনান এবং গল্প বলুন। মায়ের সাথে শিশুর bonding তার মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • টিকা: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে নিয়মিত টিকা দিন।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই সময়ে শিশুদের সঠিক খাদ্য এবং যত্ন প্রদান করলে, তাদের সুস্থ এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব। মায়ের সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ শিশুর ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করে। আপনার যদি আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন