নবজাতকের কান্না তাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। তারা কথা বলতে পারে না বলে তাদের প্রয়োজন বা অস্বস্তি প্রকাশের একমাত্র উপায় হলো কান্না। প্রথম কয়েক মাস বাবা-মায়ের জন্য শিশুর কান্নার কারণ বোঝা এবং তাকে শান্ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হতে পারে। নবজাতকের কান্নার কিছু সাধারণ কারণ এবং তাকে শান্ত করার উপায় নিচে আলোচনা করা হলো:
নবজাতকের কান্নার সাধারণ কারণ:
- ক্ষুধা: নবজাতকের কান্নার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ক্ষুধা। তাদের ছোট পাকস্থলী ঘন ঘন খালি হয়ে যায়, তাই তারা প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর পর ক্ষুধার্ত বোধ করতে পারে।
- অস্বস্তি: ভেজা বা নোংরা ন্যাপি একটি বড় অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম লাগলেও শিশু কাঁদতে পারে।
- ক্লান্তি: অতিরিক্ত ক্লান্তিও নবজাতকের কান্নার কারণ হতে পারে। অনেক সময় তারা ঘুমের প্রয়োজন অনুভব করে কিন্তু সহজে ঘুমোতে পারে না।
- পেটে ব্যথা বা গ্যাস: নবজাতকদের হজম প্রক্রিয়া এখনও পুরোপুরি বিকশিত হয় না, তাই পেটে গ্যাস বা ব্যথার কারণে তারা কাঁদতে পারে (কলি)।
- অতিরিক্ত উদ্দীপনা: অনেক সময় অতিরিক্ত শব্দ, আলো বা মানুষের ভিড়ে শিশু উত্তেজিত বা অভিভূত হয়ে কাঁদতে পারে।
- একাকিত্ব বা মনোযোগের অভাব: নবজাতকরা তাদের বাবা-মায়ের সান্নিধ্য পছন্দ করে। একা লাগলে বা মনোযোগের অভাব বোধ করলে তারা কাঁদতে পারে।
- অসুস্থতা: জ্বর, ঠান্ডা লাগা বা অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতার কারণেও শিশু কাঁদতে পারে।
- তেষ্টা: যদিও বুকের দুধে যথেষ্ট পরিমাণে জল থাকে, তবুও খুব গরম আবহাওয়ায় বা অন্য কোনো কারণে শিশু তেষ্টা অনুভব করতে পারে।
নবজাতককে শান্ত করার উপায়:
শিশুর কান্নার কারণ সনাক্ত করে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করা উচিত। কিছু সাধারণ উপায় নিচে দেওয়া হলো:
- ক্ষুধা পরীক্ষা করুন: যদি শেষবার বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ২-৩ ঘণ্টা হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে সম্ভবত শিশু ক্ষুধার্ত। তাকে বুকের দুধ দিন বা ফর্মুলা খাওয়ান।
- ন্যাপি পরিবর্তন করুন: দেখুন ন্যাপি ভেজা বা নোংরা কিনা। ভেজা বা নোংরা ন্যাপি দ্রুত পরিবর্তন করে দিন।
- তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন: শিশুর শরীর ঠান্ডা বা গরম লাগছে কিনা তা হাত দিয়ে দেখুন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাপড় পরিবর্তন করুন বা তাকে জড়িয়ে ধরুন।
- ঢেঁকুর তোলান: খাওয়ানোর পর শিশুকে সোজা করে ধরে পিঠে হালকা করে থাপ্পড় দিন যাতে তার পেটের গ্যাস বেরিয়ে যায়।
- দোল দিন: শিশুকে কোলে নিয়ে আলতো করে দোল দিন বা বেবি সুইং ব্যবহার করুন। ছন্দময় দোলানো অনেক শিশুকে শান্ত করে।
- গান বা শান্ত শব্দ শোনান: শিশুকে শান্ত করার জন্য নরম সুরে গান গাইতে পারেন বা সাদা শব্দ (White noise) যেমন ফ্যানের শব্দ বা হেয়ার ড্রায়ারের শব্দ শোনাতে পারেন।
- ত্বকের স্পর্শ: শিশুকে ত্বকের সাথে ত্বক লাগিয়ে ধরলে (Skin-to-skin contact) তারা আরাম অনুভব করে এবং শান্ত হয়।
- মালিশ করুন: হালকা হাতে শিশুর শরীর মালিশ করলে সে আরাম পাবে এবং কান্না থামতে পারে।
- প্যাসিফায়ার ব্যবহার: কিছু শিশু চোষার মাধ্যমে শান্তি পায়। যদি আপনার শিশু প্যাসিফায়ার নিতে চায়, তাহলে তা ব্যবহার করতে পারেন।
- পরিবেশ পরিবর্তন: শিশুকে শান্ত ও নীরব কোনো জায়গায় নিয়ে যান। অতিরিক্ত আলো বা শব্দ এড়িয়ে চলুন।
- গাড়িতে ঘোরানো: অনেক শিশু গাড়িতে হালকা ঝাঁকুনিতে ঘুমিয়ে পড়ে বা শান্ত হয়।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন:
যদি আপনার শিশুর কান্না অস্বাভাবিক মনে হয় (যেমন খুব দুর্বল কান্না বা একটানা কান্না যা থামানো যাচ্ছে না) অথবা যদি তার সাথে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বমি বা অন্য কোনো অসুস্থতার লক্ষণ থাকে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
নবজাতকের কান্না মোকাবিলা করা ধৈর্য্যের ব্যাপার। প্রথম দিকে বাবা-মায়ের জন্য কান্নার কারণ বোঝা কঠিন হতে পারে, তবে ধীরে ধীরে তারা তাদের সন্তানের কান্নার ধরণ এবং তার পেছনের কারণ সম্পর্কে অবগত হন। মনে রাখবেন, আপনি একা নন। প্রয়োজন হলে পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। আপনার ভালোবাসা এবং যত্ন আপনার সন্তানের সুস্থ বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।