আমার শিশু এত রাগী কেন? আপনার অজান্তেই লুকিয়ে আছে উত্তর!







 শিশুদের রাগ একটি স্বাভাবিক আবেগ। খেলনা কেড়ে নিলে, পছন্দের জিনিস না পেলে বা নিজেদের চাহিদা পূরণ না হলে শিশুরা রেগে যেতে পারে। কিন্তু যখন এই রাগ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে, চিৎকার, জিনিসপত্র ছোঁড়া বা জেদ করার মতো ঘটনা নিত্যদিনের হয়ে দাঁড়ায়, তখন বাবা-মায়েদের মনে প্রশ্ন জাগে – "আমার শিশু এত রাগী কেন?" এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আপনার দৈনন্দিন কার্যকলাপ এবং আপনার বাড়ির পরিবেশেই লুকিয়ে আছে।

১. ঘুমের অভাব:
আমরা প্রাপ্তবয়স্করা যখন পর্যাপ্ত ঘুমাই না, তখন আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শিশুরা অস্থির, বিরক্ত এবং রাগী হয়ে ওঠে। তাদের দৈনন্দিন ঘুমের রুটিন ঠিক আছে কিনা, তা খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।

২. অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং পুষ্টির অভাব:
রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে বড়দেরও মেজাজ বিগড়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। যদি শিশু ক্ষুধার্ত থাকে বা অনিয়মিতভাবে খায়, তাহলে তারা সহজেই রেগে যেতে পারে। এছাড়াও, কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদানের অভাবও শিশুদের মেজাজকে প্রভাবিত করতে পারে। ভিটামিন ডি, আয়রন, এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব শিশুদের বিরক্তি বাড়াতে পারে। সুষম এবং নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

৩. পরিবেশগত কারণ:
শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে অনেক কিছু শেখে। যদি বাড়ির পরিবেশে প্রায়শই ঝগড়া, উচ্চস্বরে কথা বলা বা স্ট্রেস থাকে, তাহলে শিশুরা তা অনুকরণ করে রাগী হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম (মোবাইল, টিভি, ট্যাব) শিশুদের ধৈর্য কমাতে পারে এবং তাদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব তৈরি করতে পারে। একটি শান্ত ও ইতিবাচক পারিবারিক পরিবেশ শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

৪. মনোযোগের অভাব:
অনেক সময় শিশুরা বাবা-মায়ের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য রাগ বা জেদ করে। যদি শিশু অনুভব করে যে তারা পর্যাপ্ত মনোযোগ পাচ্ছে না, তাহলে তারা নেতিবাচক উপায়ে হলেও মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে, শিশুর সাথে মানসম্মত সময় কাটানো, তাদের কথা শোনা এবং তাদের আবেগকে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

৫. প্রত্যাশার চাপ:
অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানের কাছে অতিরিক্ত প্রত্যাশা করেন। পড়ালেখা, খেলাধুলা বা অন্য কোনো বিষয়ে যখন শিশুরা সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না, তখন তাদের মধ্যে হতাশা জন্মায়, যা রাগে পরিণত হতে পারে। শিশুর বয়স এবং ক্ষমতা অনুযায়ী প্রত্যাশা করা উচিত।

৬. শারীরিক অস্বস্তি বা অসুস্থতা:
শিশুরা যখন শারীরিক অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করে, তখন তারা তা প্রকাশ করতে না পেরে রাগী আচরণ করতে পারে। দাঁত ওঠা, পেটে ব্যথা, সর্দি-কাশি বা যেকোনো অসুস্থতা শিশুদের অস্থির করে তোলে। তাদের আচরণে পরিবর্তন দেখলে তাদের শারীরিক অবস্থার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

৭. আবেগ প্রকাশে অক্ষমতা:
ছোট শিশুরা তাদের অনুভূতিগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। যখন তারা দুঃখ, ভয় বা হতাশা অনুভব করে, তখন তারা তা রাগের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে। তাদের এই আবেগগুলোকে চিনতে এবং সেগুলোকে ইতিবাচক উপায়ে প্রকাশ করতে শেখানো বাবা-মায়ের দায়িত্ব।

সমাধানের উপায়:

  • রুটিন মেনে চলা: ঘুম, খাওয়া এবং খেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন।

  • সুষম খাবার: পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার দিন।

  • ইতিবাচক পরিবেশ: বাড়িতে একটি শান্ত ও ইতিবাচক পরিবেশ বজায় রাখুন।

  • মানসম্মত সময়: শিশুর সাথে প্রতিদিন মানসম্মত সময় কাটান।

  • আবেগ চিনতে শেখান: শিশুকে তাদের আবেগগুলো চিনতে এবং প্রকাশ করতে শেখান।

  • ধৈর্য ধরুন: শিশুর রাগকে সহানুভূতি ও ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করুন।

  • উদাহরণ স্থাপন করুন: আপনার নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শিশুর জন্য ভালো উদাহরণ তৈরি করুন।

আপনার শিশুর রাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন শিশুর প্রতি আপনার গভীর মনোযোগ এবং সহানুভূতি। কারণ, শিশুরা আমাদেরই প্রতিচ্ছবি। আপনি যেভাবে তাদের সাথে আচরণ করবেন, তারা সেভাবেই গড়ে উঠবে।

ধন্যবাদ আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য পেশ করার জন্য

নবীনতর পূর্বতন

Random

Ads

نموذج الاتصال